হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসা ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়
সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের
পরিবর্তন আনতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখন প্রশ্ন শুধু এ–ই নয় যে
ফেডারেল রিজার্ভ ট্রাম্পের অধীন কীভাবে পরিচালিত হবে; বরং এটি চালু থাকবে
কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে সরাসরি
ফেড বিলুপ্ত করার সমর্থনে বক্তব্য দেননি। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেছেন, যে বিষয় নিয়ে
অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, ফেডের নিয়মাবলি
পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য কার্যকর হতে পারে। তবে সরাসরি ফেড
বিলুপ্তির সমর্থনে তাঁর আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানা যায়নি।
এ
ক্ষেত্রে ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় ফেড বিষয়ে ট্রাম্প
প্রশাসনের কী অবস্থান হতে পারে, তার ইঙ্গিত আছে। মাস্ক ট্রাম্পের অন্যতম
প্রধান সমর্থক এবং তাঁর প্রশাসনের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করবেন। রিপাবলিকান সিনেটর মাইক লি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট
করেছেন, যেখানে তিনি ফেডারেল রিজার্ভ বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মাস্ক এই পোস্ট শেয়ার করার সময় ‘১০০’ ইমোজি যোগ করেন, সাধারণত কোনো মতের
প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
বিষয়টি হচ্ছে,
সিনেটর মাইক লি কী বলেছেন। এক্সের সেই পোস্টে তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগ
প্রেসিডেন্টের অধীন থাকা উচিত। তাঁর এই পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পর ফেড
চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প তাঁকে পদত্যাগ করতে
বললেও তিনি পদত্যাগ করবেন না। মাইক লি মনে করেন, ফেডারেল রিজার্ভ এমন একটি
প্রতিষ্ঠান, যা মার্কিন সংবিধানের নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে। ফেডকে বিলুপ্ত
করার এটি আরেকটি কারণ—এই মর্মে তিনি এন্ড দ্য ফেড শীর্ষক হ্যাশট্যাগও
দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে
ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটির উত্তরণকালীন মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট সিএনএনকে
জানান, কোনো নীতিকে আনুষ্ঠানিক বলে বিবেচনা করা উচিত কেবল তখনই, যখন তা
সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তরফ থেকে জানানো হবে।
ফেডারেল
রিজার্ভ বিলুপ্ত করার দাবি নতুন কিছু নয়। সাবেক কংগ্রেসম্যান রন পল ২০০৯
সালে ‘এন্ড দ্য ফেড’ শীর্ষক বই প্রকাশ করেন; যিনি একবার লিবারটেরিয়ান এবং
দুবার রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তিনি
ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা ও কার্যপ্রণালির সমালোচনা করে সংস্থাটি
বিলুপ্তির পক্ষে মত দেন।
এরপর চলতি বছরের জুন মাসে কেনটাকির
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি ও সিনেটর মাইক লি ফেডারেল রিজার্ভ
বিলুপ্ত করে সংস্থাটির দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট)
কাছে হস্তান্তর করার লক্ষ্যে বিল উত্থাপন করেন।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প
এখন পর্যন্ত ফেড বিলুপ্ত করার দাবির পক্ষে জনসমক্ষে কিছু বলেননি। যদিও
নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যবিধি পরিবর্তনের কথা
বলেছেন, যে কথা শুনে অনেক অর্থনীতিবিদ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের
জনগণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিপুল ভোটে পুনরায় নির্বাচিত করেছেন। এ বিজয়ের
বলে বলীয়ান হয়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি যেসব অঙ্গীকার করেছেন, সেগুলো
বাস্তবায়নের রায় পেয়েছেন। সিএনএনকে পাঠানো এক ই–মেইল বার্তায় লিয়াভিট এসব
কথা বলেছেন। ট্রাম্পের অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে একটি হলো সুদহার অনেকটা কমিয়ে
আনা—আগস্ট মাসে জাতীয় কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের বার্ষিক সম্মেলনে ট্রাম্প এ
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদিও সুদহার নির্ধারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের
প্রত্যক্ষ প্রভাব নেই।
৭০
বছরের বেশি সময় ধরে ফেডারেল রিজার্ভ কংগ্রেসের অঙ্গীকারের আলোকে
মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতা এবং সর্বাধিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সময়ে কংগ্রেস ফেডের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে।
তারা যেন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিশ্চিত করেছে।
এ
স্বাধীনতায় বলীয়ান হয়ে ফেড কর্মকর্তারা জনমতের তোয়াক্কা না করে সুদহার
নির্ধারণ করতে পেরেছেন, যদিও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির স্বার্থের কথা ভেবেই
তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার কমানোর দাবি
উপেক্ষা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ
পর্যায়ে রেখেছে। দুই মাস আগে তারা অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে—মূল্যস্ফীতির
হার ফেডের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে এসেছে।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েলকে অপসারণ বা পদাবনতি করার হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, ফেডের সুদহার অনেক বেশি।
ফেডের
স্বাধীনতায় হাত দেওয়ার আইনি এখতিয়ার ট্রাম্পের আছে কি না বা ফেডের কোনো
কর্মকর্তাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অপসারণ করার অধিকার আছে কি না, তা
পরিষ্কার নয়। গত সপ্তাহে ফেডের দুই দিনের অর্থনীতিবিষয়ক নীতিসভার পর এক
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পাওয়েল বলেন, আইনগতভাবে তা করার অনুমোদন নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে শুধু ‘কারণ’ থাকলে অপসারণ করা যেতে পারে,
ফেডারেল রিজার্ভের আইনে যা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যে কারণে অপসারণ করা
যাবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও শুধু প্রেসিডেন্টের
সঙ্গে নীতিগত অমিলের কারণে ফেড চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা যেত পারে, এটা মনে
করার যৌক্তিক কারণ নেই।
ফেড এ অবস্থান বজায় রাখতে পারবে কি না, তা
পরীক্ষা করার সুযোগ পেতে পেতে সম্ভবত ২০২৫ সালে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের
ক্ষমতার ভারসাম্য এখনো নির্ধারিত হয়নি, সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের
হাতে। সুপ্রিম কোর্টের নয়জন বিচারকের মধ্যে ছয়জনকে রিপাবলিকান
প্রেসিডেন্টরা নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অর্ধেককেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম
মেয়াদে নিয়োগ দিয়েছেন।
শীর্ষ আদালতে ফেডকে চ্যালেঞ্জ করে কেউ এই
যুদ্ধে বিজয়ী হবেন—এ প্রত্যাশা করা যায় না। সুপ্রিম কোর্ট এ বছর ৭-২ ভোটে
রায় দিয়েছেন, কনজ্যুমার ফিন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরো বর্তমান কাঠামোয়
কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে, যদিও অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এটিকে
সংবিধানবিরোধী হিসেবে যুক্তি দিয়েছেন।
এ ছাড়া গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট
একটি মামলায় শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানান। মামলার আরজিতে স্বাধীন কনজ্যুমার
প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন ভেঙে দেওয়ার হুমকি ছিল। ফেডের পরিচালনা পর্ষদের
সদস্যদের মতো কনজ্যুমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশনের সদস্যদেরও শুধু ‘কারণ’
থাকলে অপসারণ করা যেতে পারে; এই অপসারণের ক্ষমতা কেবল প্রেসিডেন্টের।